ব্যারাকপুরের দাশগুপ্ত বংশের অন্নপূর্ণাপুজোঃ- ঐতিহ্যে ও ধারাবাহিকতায়


ঐতিহ্যের অন্নপূর্ণাপর্বঃ
 দোল উৎসবের পরেই আসছে শ্রীশ্রীঅন্নপূর্ণা মাতাঠাকুরাণীর উৎসব বঙ্গদেশ জুড়ে বনেদীয়ানা পরিবার আগেই অন্নপূর্ণাপুজো নিয়ে পর্বালোচনা শুরু করেছিল, আজ থেকে আবারও পর্বালোচনা শুরু হল আজ অন্নপূর্ণাপর্বের দশমপর্ব, প্রকাশিত হল দাশগুপ্ত বংশের অন্নপূর্ণাপুজোর রীতিনীতি নিয়ে আলোচনা লিখলেন শুভদীপ, চলুন দেখা যাক সেই বংশের দেবীপুজোর বিশেষ রীতিনীতি
ব্যারাকপুরের দাশগুপ্ত বংশের অন্নপূর্ণাপুজোঃ- ঐতিহ্যে ধারাবাহিকতায়

প্রসঙ্গত দাশগুপ্ত বংশের সাথে ওতপ্রোত ভাবে বিখ্যাত সেন বংশের যোগসূত্র রয়েছে বহুদিন ধরেই বল্লাল সেন যখন গৌড়ের সাথে নবদ্বীপকেও রাজধানী হিসাবে ঘোষনা করেন, তখন ১১৭০ সাল নাগাদ পার্শবর্তী বর্ধমান জেলাতে এই দাশগুপ্ত বংশের সূচনা বলে ধরা হয় পরবর্তীকালে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে (১২০৩-০৪খ্রীঃ) যখন বখতিয়ার খলজী বাংলা আক্রমণ করলে তুর্কীদের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে দাশগুপ্ত বংশের সদস্যরা পালিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেন বর্ধমানে থাকাকালীন দাশগুপ্ত পরিবারে দুর্গাপুজো, কালীপুজো কৃষ্ণপুজোর প্রচলন ছিল, পরিবারে পুজো হত শাক্তমতে
 চট্টগ্রামে থাকাকালীন দাশগুপ্ত জমিদার বংশে কুলদেবতা হিসাবে পুজিত হতেন শ্রীশ্রী কালাচাঁদ জীউ লক্ষ্মীদেবী কষ্টিপাথরের কালাচাঁদ জীউ'এর মূর্তি তাঁদের সেবাপুজো স্বপ্নাদেশ পেয়েই শুরু হয়েছিল পরিবারে পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গে মুসলমান আক্রমণের ফলে সেই বিগ্রহ চুরি হয়ে যায় বর্তমানে দাশগুপ্ত পরিবারের সদস্যরা কৃষ্ণরূপী কালাচাঁদ জীউ এবং শ্রী লক্ষ্মীদেবীর নিত্যপূজা করে থাকেন
 অতীতে দাশগুপ্ত বংশে দুর্গাপুজো কালীপুজোতে বলিপ্রথার প্রচলন ছিল কিন্তু উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে এই পরিবারে শক্তিপুজোর প্রচলন বন্ধ হয়ে যায় একটি বিশেষ কারণে কালীপুজোর দিন কুলপুরোহিতের পুজো করতে বিলম্ব হওয়ায় বংশের দশমপুরুষ তাঁকে অসম্মানজনক কথা বলেন, এই ব্যবহারে কুলপুরোহিত খুবই অসম্মানিত বোধ করেন তিনি পুজো অসমাপ্ত রেখেই চলে যায় বলে যান এই পরিবারে আর কোনদিনও শক্তিপুজো হবে না তারপর বংশের বহু বংশধর বাড়িতে শক্তিপুজোর প্রচলন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কোন না কোন কারণে তা বাঁধা পরে পুজো বন্ধ হয়ে যায়

 দাশগুপ্ত বংশের দ্বাদশপুরুষ শ্রী ব্রজেন্দ্র কুমার দাশগুপ্ত ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে আসেন কলকাতা সরকারি মহাবিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার জন্য এবং ভালোভাবে পাশ করে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি শ্যামবাজারে বসবাস শুরু করেন, বিভাজনের সময় চট্টগ্রাম থেকে বংশের প্রায় সকলেই কলকাতায় চলে আসেন ব্রজেন্দ্রবাবুর আশ্রয়ে থাকতে শুরু করেন ১৯৬৩ সাল নাগাদ ব্রজেন্দ্রবাবু উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন এবং দাশগুপ্ত বংশের সদস্যরাও ব্যারাকপুরে স্থানান্তরিত হন পুজোর কথা আলোচনা করা হলেও কেউ সাহস করে সেই পুজো করার চেষ্টা করেন নি
 ব্রজেন্দ্রবাবুর বড়পুত্র রনজিৎ দাশগুপ্ত মানসিক ইচ্ছা প্রকাশ করেন দেবী অন্নপূর্ণা রূপে মায়ের পুজো শুরু করার তবে পুজো শাক্তমতে না করে বৈদিক মতে পুজো করার পরিকল্পনা করেন সেই ইচ্ছায় রনজিৎবাবুর পুত্র এই পুজোর প্রচলন করেন এই দাশগুপ্ত বংশের সদস্যরা পূর্ববঙ্গে থাকাকালীনই তাদের চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল অন্নপূর্ণাপুজোতে বর্তমানে শর্করা বলিদান হয় ভোগে থাকে সাদাভাত, পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, বিভিন্ন রকমের তরকারি, লুচভোগ, চাটনি, পায়েস বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন ইত্যাদি এইভাবে ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখে আজও দেবীপুজোর জন্য দাশগুপ্ত বংশে মা অন্নপূর্ণার পুজো হয়ে আসছে বনেদীয়ানা পরিবারের পক্ষথেকে দাশগুপ্ত পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দদের জানাই আগাম শুভেচ্ছা অভিনন্দন


কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ- শ্রী অরিঘ্ন দাশগুপ্ত মহাশয়
তথ্য লিপিবদ্ধেঃ- শুভদীপ রায় চৌধুরী



Comments

Popular posts from this blog

ঐতিহ্যের দত্ত চৌধুরী পরিবারঃ- আন্দুল, হাওড়া

ঈশ্বরকোটি শ্রীমৎ স্বামী যোগানন্দজী মহারাজের ১৬০তম জন্মবর্ষ উৎসব

শান্তিপুরের গ্রামীণ বাগদেবী মন্দিরঃ- বাগআঁচড়া